জামায়াতের জাতীয় সমাবেশে সাত দফা দাবি বাস্তবায়নে জোর তাগিদ
বার্তালোক ডট কম
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ জুলাই ২০২৫, ৬:৫৬ মিনিটবিশেষ প্রতিনিধি : স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে এই প্রথমবারের মতো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশে বক্তারা দলটির ঘোষিত সাত দফা দাবি বাস্তবায়নে জোর তাগিদ দিয়েছেন। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, মৌলিক সংস্কার ও সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে তাঁরা আরো বলেছেন, দেশের জনগণ অতীতে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, প্রয়োজনে আবারও দাঁড়াবে।
জামায়াত ঘোষিত সাত দফা দাবিতে গতকাল শনিবারের এই আয়োজন ঘিরে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা যায় উৎসবমুখর পরিবেশ। বাস, ট্রেন, লঞ্চসহ নানা পরিবহনে করে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ঢাকায় ছুটে আসেন।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিলের ঢল নামে সমাবেশস্থলে। অনেকের পরনে ছিল জামায়াতের লোগোযুক্ত টি-শার্ট, মাথায় সাদা ফিতা, হাতে দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা। সব মিলিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের এলাকা যেন পরিণত হয় এক উৎসবমুখর রাজনৈতিক মিছিলে। এ সমাবেশে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল আমন্ত্রণ পায়নি।
সমাবেশের মূল মঞ্চ ছিল উদ্যানের পূর্বপাশে, তবে স্থান সংকুলান না হওয়ায় অনেকে আশপাশের রাস্তায় বসেই বড় ডিজিটাল পর্দায় সমাবেশ দেখেন। শাহবাগ, মৎস্য ভবন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এসব ডিজিটাল পর্দা বসানো হয়। সেখানে বসে অনেকেই সমাবেশের বক্তব্য শোনেন।
এই আয়োজন ঘিরে রাজধানীর গণপরিবহন চলাচলে প্রভাব পড়ে।
সকাল থেকেই বাস চলাচল সীমিত ছিল, বিশেষ করে শাহবাগ এলাকায় এ পরিস্থিতি দেখা যায়। ব্যক্তিগত গাড়ি, রিকশা ও অ্যাম্বুল্যান্স ছাড়া অন্য কোনো যান চলছিল না। যানজট নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি কাজ করেছে জামায়াতের ছয় হাজার স্বেচ্ছাসেবক। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঢাকার বাইরে থেকে আসা জামায়াত নেতাকর্মীদের বহনকারী বাসের সারিবদ্ধ অবস্থান দেখা যায়। রাজধানীর শেরেবাংলানগর এলাকায় বাণিজ্য মেলার পুরান মাঠ ও এর আশপাশে অবস্থান নিয়েছিল প্রায় ৫০০ বাস।
সাত দফা দাবি : জামায়াত ঘোষিত সাত দফা দাবিতে রয়েছে—অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ; সব গণহত্যার বিচার, প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার, ‘জুলাই সনদ’ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন; জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারের পুনর্বাসন; সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন ও এক কোটিরও বেশি প্রবাসী ভোটারের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন দলের আমির শফিকুর রহমান। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত শহীদ পরিবারের সদস্য ও জুলাই যোদ্ধাদের কয়েকজন। দেশের কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারাও অংশ নেন।
সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আগামী বাংলাদেশে আরেকটা লড়াই হবে, ইনশাআল্লাহ। একটি লড়াই হয়েছে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, আরেকটি লড়াই হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে, দুর্নীতির মূলোৎপাটনের জন্য। তারুণ্য ও যৌবনের শক্তিকে একত্র করে সেই লড়াইয়ে আমরা বিজয় লাভ করব।’
মঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেওয়ার সময় হঠাৎ পড়ে যান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির। কিছু সময় পর তিনি আবার দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিতে থাকেন। কিন্তু তিনি আবারও মঞ্চে পড়ে যান। পরে তিনি বসে বক্তব্য শেষ করেন। বিকেলে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, শেখ হাসিনা জামায়াতের প্রবীণ নেতাদের ফাঁসি দিয়েছেন, দলটির নিবন্ধন বাতিল ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছেন। জামায়াত একটি মজলুম দল, যারা শহীদ পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমাদের আমির একজন মানবিক নেতা, যিনি কল্যাণমূলক ও সুশাসনভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। তরুণদের প্রথম ভোট হোক দাঁড়িপাল্লার পক্ষে।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ধর্মীয় জঙ্গিবাদ হোক বা রাজনৈতিক জঙ্গিবাদই হোক, বাংলাদেশে আর কোনো জঙ্গিবাদ মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। জামায়াতে ইসলামী এ দেশের মাটি ও মানুষের দল। সব ধরনের জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জামায়াতই প্রথম রুখে দাঁড়াবে এবং লড়াই করবে।
ডা. তাহের বলেন, আজকের জনসভাকে প্রশান্ত মহাসাগরের সঙ্গে তুলনা করা যায়। প্রশান্ত মহাসাগরে সামনে তাকালে যেমন পানি ছাড়া কিছু দেখা যায় না, তেমনি এই জনসমুদ্রেও আজ সামনে তাকালে মানুষ ছাড়া আর কিছু দেখা যাচ্ছে না।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান বলেন, গণহত্যার বিচারের নামে কোনো তামাশা জনগণ মেনে নেবে না। সরকারের ভেতরে-বাইরে থাকা ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
দলটির নায়েবে আমির হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, নির্বাচনব্যবস্থাকে টাকা ও ফ্যাসিবাদমুক্ত করতে আনুপাতিক পদ্ধতি চালু অপরিহার্য। বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলই এ ব্যবস্থার পক্ষে।
ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, শহীদ পরিবারগুলো বিচার পাচ্ছে না, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। জুলাই যোদ্ধাদের স্বীকৃতি দিয়ে ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা করতে হবে।
সমাবেশে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ন্যূনতম ইসলাম পালনের অধিকার পর্যন্ত কেড়ে নিতে চেয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, যারা জাতীয় নির্বাচনে উচ্চকক্ষে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) ব্যবস্থা চায় না, তারা জাতির সঙ্গে প্রতারণা করছে। আখতার হোসেন জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশে ধর্ম পালনের কারণে আর কাউকে বৈষম্যের শিকার হতে দেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররা দেশের জনগণের ওপর যেসব অপরাধ করেছে, সেগুলোর বিচার না হলে ২০২৪ সালের শহীদদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে। জনগণের ন্যায্য অধিকার ও শহীদদের রক্তের মর্যাদা রক্ষায় বিচারের দাবিতে দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে।
এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে সুধী নয়, বরং অভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকারের ভূমিকা পালন করতে হবে। এক বছরের জুলাই অভ্যুত্থান পেরিয়ে এসেও বাংলাদেশে মুজিববাদের ষড়যন্ত্র এখনো শেষ হয়নি, বিশেষ করে গোপালগঞ্জে তাদের উপস্থিতি স্পষ্ট। তিনি বলেন, মুজিববাদকে শুধু আইনি পথে মোকাবেলা নয়—অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। মতপার্থক্য থাকলেও মুজিববাদবিরোধিতায় সব অভ্যুত্থানপন্থী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
সারজিস অভিযোগ করেন, মুজিববাদী ও ভারতপন্থী শক্তি আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে, যার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার সময় এসেছে। তিনি বলেন, হাজারো ছাত্র-জনতা প্রাণ দিয়েছে, কিন্তু সেই স্বপ্ন এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। খুনি হাসিনার বিচার দাবি করে তিনি বলেন, বিচার বিভাগ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী যেন নিরপেক্ষ থাকে এটাই জনগণের আকাঙ্ক্ষা।
তিনি আরো বলেন, নতুন সংবিধান ও গণপরিষদ নির্বাচন দরকার, যেখানে নারী ও সংখ্যালঘুদের অধিকার সুনিশ্চিত করা হবে। ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিযোগিতা থাকবে, কিন্তু অন্ধ অনুসরণ নয়। এভাবেই রাজনীতির সৌন্দর্য রক্ষা পাবে এবং বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।
গণ-অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, আল্লাহ ধন-সম্পদ ও ক্ষমতা দিয়ে মানুষকে পরীক্ষা করেন। গত ১০ বছর আমাদের কাছ থেকে সব কিছু নিয়ে পরীক্ষা করেছেন, আমরা সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি এবং ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে উত্খাত করেছি। বিপদ কেটে গেলে মানুষ অহংকারী হয়ে পড়ে। আজ আমাদের কিছু সহযোদ্ধা বিজয়ে উল্লসিত হয়ে জুলুমে জড়িয়ে পড়ছেন। মনে রাখতে হবে, ‘আমরা যদি সীমা লঙ্ঘন করি, আল্লাহ আমাদেরও ক্ষমা করবেন না। অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে নুর বলেন, রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই ঐতিহাসিক পরিবর্তনকে টেকসই করতে হবে। মৌলিক শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তন ছাড়া নির্বাচনের দিকে যাওয়া যাবে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘নির্বাচনের আগে সব দলের জন্য সমান সুযোগ, নিরপেক্ষ প্রশাসন এবং একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে অবিলম্বে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনেরও আহবান জানাই।’
ছাত্রশিবিরের সাহিত্য সম্পাদক ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম সমন্বয়ক সাদিক কায়েম বলেন, আগামীর বিপ্লব হবে ইসলামের বিপ্লব। দেশের জনগণ অতীতে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, এবারও দাঁড়াবে। শাপলা চত্বর, ক্যাম্পাস এবং সর্বশেষ জুলাই অভ্যুত্থানে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের স্মরণ করে তিনি বলেন, এই বিপ্লব কেবল আবেগ নয়, এটি ঐতিহাসিক চেতনার জাগরণ।
সাদিক কায়েম বিগত সরকারের নানা দমন-পীড়নের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, সাঈদীর রায়-পরবর্তী দমননীতি, ২০১৩ সালের শাপলা অভিযানে হত্যাকাণ্ড, আবরার ফাহাদের হত্যা—এসবই শোষণের প্রমাণ। দেশের ভবিষ্যৎ, সার্বভৌমত্ব ও ইসলামী মূল্যবোধ রক্ষায় সবাইকে এক হতে হবে। জামায়াতের সাত দফা জনগণের অধিকার ও নিরাপত্তার দাবি, আর তা বাস্তবায়নে আরেকটি বিপ্লব এখন সময়ের প্রয়োজন।
বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ প্রামাণিক বলেন, জামায়াতে ইসলামী শুধু একটি রাজনৈতিক দল নয়, এটি একটি ‘ইউনিভার্সাল ইউনিভার্সিটি’। তিনি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, ‘১৯৫৪ সালে দলটি গঠনের শুরু থেকেই হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব অস্বীকার করে এসেছে। দীর্ঘদিন আমরা আওয়ামী লীগের কাছে যেন রাজনৈতিক বন্দি ছিলাম। তাদের উদ্দেশ্যই ছিল হিন্দু প্রতিনিধিত্ব ধ্বংস করা। তারা বারবার আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।’ তিনি দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস এবং টেন্ডারবাজি দিন দিন বেড়েই চলেছে।
সমাবেশে বক্তব্য দেন বুয়েটে ছাত্রলীগের হাতে নির্মমভাবে নিহত আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ। তিনি গত ১৬ বছর আওয়ামী লীগের শাসনামলে দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে র্যাগিংয়ে নিহত শিক্ষার্থীদের তালিকা করতে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, ‘আমার ছেলে আবরারের কী দোষ ছিল? সে ফেসবুকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন চুক্তির সমালোচনা করে স্ট্যাটাস দিয়েছিল। তা ছাড়া ’৪৭-এ দেশ ভাগের পর দেশের পশ্চিমাংশে কোনো সমুদ্রবন্দর ছিল না বলেও সে স্ট্যাটাস দিয়েছিল। এসব দেশবিরোধী চুক্তি নিয়ে দেশের পক্ষে কথা বলার জন্য আবরারকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনার ছয় বছর পরও তার হত্যার বিচার পায়নি। আমি অতি তাড়াতাড়ি তার হত্যার বিচার দেখতে চাই।’
সমাবেশ সঞ্চালনা করেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ ও উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিম।
জামায়াত নেতাদের মধ্যে আরো বক্তব্য দেন যাঁরা : সমাবেশে জামায়াত নেতাদের মধ্যে আরো বক্তব্য দেন নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন, বাংলাদেশ ল’ ইয়ার্স কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সভাপতি অ্যাডভোকেট জসীম উদ্দিন সরকার, ড. ফায়জুল হক, শিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সাদ্দাম, কেন্দ্রীয় নেতা সাদিক কায়েম, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান।
অন্য দলের আরো যাঁরা বক্তব্য দেন : সমাবেশে অন্য দলগুলোর নেতাদের মধ্যে আরো বক্তব্য দেন, হেফাজতের নায়েবে আমির মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলামী পার্টির মহাসচিব মুসা বিন ইজহার, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা আবু জাফর কাসেমী, নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান হামিদী, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম, জাতীয় গণতান্ত্রিক দল জাগপার সহসভাপতি ও মুখপাত্র রাশেদ প্রধান।
জুলাই যোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের যেসব সদস্য উপিস্থিত ছিলেন : শহীদ পরিবারের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আবু সাঈদের ভাই আবুল হোসেন ও রমজান হোসেন, ইমাম হাসান তাইয়িমের ভাইসহ আরো কয়েকজন। আহত জুলাই যোদ্ধাদের মধ্য থেকে বক্তব্য দেন জুনায়েদ হাসান, রেদোয়ান নাবিল, এম এইচ মোস্তাফিজুর রহমান ও শাহ আলম।
জামায়াতের সমাবেশকে কেন্দ্র করে শনিবার দিনভর দুই ধরনের দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী। অনেককে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও যানবাহন পেতে বেগ পোহাতে হয়েছে। বাধ্য হয়ে অনেকে হেঁটে গন্তব্যে রওনা হন। এই দুর্ভোগের কারণে জামায়াতে ইসলামী সবার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছে।
বিএনপিসহ বেশ কিছু দল আমন্ত্রণ পায়নি : জাতীয় সমাবেশে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদসহ ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী’ ডান ও ধর্মভিত্তিত দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানায় জামায়াতে ইসলামী। তবে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বিএনপি ও তাদের সমমনা দল এবং বামপন্থী দলগুলোকে। দলত্যাগী জামায়াতের সাবেক নেতাদের দল এবি পার্টিকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। বেশ কয়েকটি দল আমন্ত্রণ পেলেও সমাবেশে যোগ দেয়নি।
জামায়াতের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পিআরের পক্ষে থাকা দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
বিএনপিকে আমন্ত্রণ না জানানোর কারণ সম্পর্কে জামায়াতের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, সমাবেশ করা হচ্ছে আনুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর) নির্বাচনের দাবিতে। বিএনপি পিআরের বিপক্ষে। তাই আমন্ত্রণ করা হয়নি। আমন্ত্রণ করলে দুই দলকে বিব্রত হতে হতো।
এবি পার্টিও পিআর চায়। তার পরও সমাবেশে আমন্ত্রণ না করার কারণ সম্পর্কে জামায়াতের ওই নেতা জানান, এবি পার্টি মজিবুর রহমান মঞ্জুর প্রতি জামায়াতের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ। কারণ তিনি নিয়মিত জামায়াতের সমালোচনা করেন। তিনি সমাবেশে বক্তৃতা করলে কর্মীরা প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেন। এই ঝুঁকির কারণে আমন্ত্রণ করা হয়নি এবি পার্টিকে।
সূত্র : কালের কণ্ঠ